রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

তুমি

তুমি

-তানি হক

আশ্চর্য এক প্রদীপ আছে তোমার  হাতে 
কুয়াশার গাড় আস্তর ভেদ করে যে লণ্ঠন জ্বালাও প্রতিক্ষণ  
তার সুপ্ত দীপকে মুমূর্ষু  আলোর কণিকাও দপ করে প্রাণ ফিরে পায় ।
ক্ষয়ে যাওয়া পঙক্তি,খসে পড়া দুর্বল মৌনতা 
তোমার হাতের উলটো পিঠে সবই যেন  চঞ্চল চারুলতা ।
মনে হয় ঘুরন্ত সৌরজগৎ  
মুহূর্তে বিষণ্ণতা গ্রাস করে নেয়া এক সুদীপ্ত ব্ল্যাকহোল 
তোমার আঁখি দুটি।
যে বুকে কান্নার আড়ত – যে জলে ধূলোর সুরমা ।
সে পথের পাথর পরতেও 
অভ্যুদিত সূর্যের পালক ঝরে তোমার স্পর্শে ।
আমি কম্পিত চোখে দেখি
মেঘের পাটাতনে তুমি ঘুমের জলচৌকি নিয়ে বসে আছ ।
ঠোঁটে অন্তর্মাধুর্য উত্তাপ 
প্রস্ফুটিত স্বপ্নের বাঁকল ছড়ায়   
আমি রঙ পেনসিলে আঁকি সেই যাদুর মোহ ।  
বাতাসের কপাট জুড়ে দেখি তোমার মুখ।  
আর অস্পষ্ট স্বরে বলি  
পৃথিবীর সকল আঁধার জমাট বাঁধুক । 
ধাতব অসুখের উত্তাপ মিশে যাক চন্দ্র গ্রহণে  
শুধু তুমি ! প্রিয়তম আমার ! 
এ হৃদয়ে দুষ্ট মেঘের অনুরণন হয়ে থেকো।

বাইতুল্লাহর মিনার






বাইতুল্লাহর মিনার
- তানি হক

রক্তে যে তুফান ওঠে প্রতিক্ষণ 
এর পূর্বাভাস তো তুমি জানো 
বুক চিরে বয়ে চলা নদীর স্ব-পাঠ । বিষাদ আস্তর । 
বৈরাগী বাতাসে ধূসর পাতার উড়ো উড়ি , 
তুমি তো অবগত আছ সে নিদ্রাহীন জ্বালা পোড়ার ক্ষত-চিত্রের 
তবুও বুকে জ্বর-তাপ নিয়ে 
প্রতিদিন স্বপ্ন হাটে আনাজ কিনি 
নীল পাসপোর্ট ... ঝলমলে ভিসা । চোখে ভ্রম হয় ।
এই বুঝি শুনি মদিনার ডাক । দেখি ... মরুর পথ । 
হাতের তালুতে অপেক্ষার ফাসিল 
পৌরাণিক বৃষ্টি চায় সোনা গলা মেঘ।
লোহিত সাগর বুকে ঢেউ তোলে 
আধো স্বপ্ন আধো জাগরণে । 
ওহুদ পাহাড় ছায়া হয়ে দোলে, মননে - স্বননে । 
হৃদয় স্লেটে ছন্দ তুলি । ঝরা পাতা – নক্ষত্র গুণী
কত ক্রোশ হল পার ।
আর কত দূর । বল না প্রভু ! বাইতুল্লাহর মিনার ।

গ্রানাইট জীবন

গ্রানাইট জীবন

- তানি হক

এক হ্রদ শীতল জলে ডুবে গেছে আঁখি যুগল।
তবুও স্পষ্ট দেখতে পারছি  
কি ভাবে নীলাভ বুদবুদে মিশে যায় ঘর্মাক্ত নিঃশ্বাস ।
কতিপয় সূক্ষ্ম জলকণা    
কি ভাবে  ভেদ  করে হিম পাপড়ি
অনুভবের দরোজায় প্রাত্যহিক জলযান
পাটাতন ফেলে 
আঁকে সেই পরোক্ষ উপলব্ধির নির্ভুল ম্যাপ...।   
প্রকম্পিত ঢেউ কণিকা জ্বলছে মিটি মিটি      
শ্রূয়মাণ ভ্রম আঁচর কাটে ঠোঁটে ।
চিবুকের দ্বীপে আছড়ে পড়া স্টারফিস কম্পনে 
দূরবর্তী আকাশ অবিরত মাপে
স্বর্গ জেটি কত দূর,  কত নটিক্যাল !  
বৃষ্টিবন্ধনে খসে পরে আনার দানা  
অগ্নিপ্রভ ক্রোধানল 
অরুণাভা আবেশে নিভে জায়  
সময়-ফলকের শানিত রহস্যে 
তবুও...বাতাস বয়ে আনে যষ্টিমধু সুখ   
তবুও...স্বপ্ন-আদ্রতায় ভিজে যায় জিভ
হেসে ওঠে চকমকি অশ্রুত ।   
অতঃপর ,তুষার ধোয়া ঝাপসা গগলসে
সামুদ্রিক সূর্য গলে পরলে মনে হয়... 
এই বুঝি প্রাণ ফিরে পেল কৃশানু- তাপ, গ্রানাইট জীব

নিথর-ফালগুণ

নিথর-ফালগুণ

- তানি হক

সারাক্ষণ কোলাহলে
লেপ মুড়ি দিয়ে ওম নেই 
তবু...নীরবতার ক্লান্তিজলে ডুবে মরি । 
বিষণ্ণতার শালবনে 
দূরগামী আমিষ-দুঃখের কড়া নাড়া ।    
যমুনার তীরে-   
জোনাকির আম্রকাননে হলুদ মুকুল ঝরে ।  
আমি দীর্ঘশ্বাসের পাখনা মেলে
নিভৃতে সাঁতার কাটি ধূসর ঘাসে 
যদি খুঁজে পাই আনমনে কিছু ফড়িং-পাখনা, তামার শিশির...।     
হৃদয়ের শার্শি বেয়ে নামে হিম কুয়াশা- মিছিল
অপেক্ষায় নয়ন পেতে রই 
অনুপ স্মৃতির ঝাঁপি খুলে, কুড়াই শঙ্খ-প্রবাল অশ্রু  
অযুত-বেদনার শীর্ণ কাঁথায় সুঁই তুলি সমর্পণে । 
কি মন্থর গতিতে ভেঙে চলি শুদ্ধ সুখ-পাথর 
বিষাদের লোকালয় হেঁটে যায় চন্দ্র মল্লিকা, ক্রন্দন-প্রহর ।   
নিথর-ফালগুণ  । 
 
অবশেষে...গীতবাদ্যের আসোরে জেগে ওঠে পিঙ্গল-মন ।   
সবুজের ধূপছায়াতে ডিঙি-বকের আলোক-ভ্রমণ 
কেড়ে নেয় জিপসি-প্রাণ । স্নেহের-শিডিউল ।  
আর ষোড়শী- দুপুরে...মেঘের আর্দ্রতায় 
নিদারুণ বিলাপে কেঁদে ওঠে আমার অবিনয়ী-ক্ষুব্ধ অহং ।

ভাবাবেগ

ভাবাবেগ
- তানি হক

জানি না হঠাৎ  এ কি হল 
দৃষ্টি জুড়ে কুয়াশা সাগর তো
আগে থেকেই আলো ছড়িয়েছে
তবে আজ কেন এমন চঞ্চল কম্পন
গলে পড়ল হাতের কার্পেটে
আমি জন্মান্ধ নই , অথবা সদ্য ফুটে ওঠা
ভোরের শালখানা কাঁধে জড়িয়ে আড়মোড় ভাঙিনা প্রত্যূষ আবেগে   
তীব্র গরম,খুব তীক্ষ্ণ স্বাদ 
এমন স্বপ্নে জিভ পুড়িয়েছি বহুবার 
চলৎশক্তিহীন হয়েছি ফুটন্ত তাপে
অতঃপর মর্নিং ওয়াকে র‍্যাম্পবেরি রস  
আমার সাদা কেডস রঙিন করেছে কতবার ।  
এসবই সু দীর্ঘ আলাপন ।
হৃদয় এখন অবুঝ নয়, শিশুসুলভ হাসির
কোনও তৎপরতা মাপার ও পক্ষপাতী নয় ।
অথচ এই যানজট  প্রহরে
সবুজ হাসির প্রত্যাবর্তন
নতুন করে ভাবাবেগ উঠলে ওঠাবে
এমন ও কি ভেবেছিলো আদিম ভুবন ।

জীবন্ত প্রহর

জীবন্ত প্রহর
- তানি হক


এইতো এখানেই বসেছিলাম
আপেল বাগানের গোলাপি আগুনে ।
অখণ্ড নীরবতার শিল্পময় শিহরণ
ছুঁয়ে যাচ্ছিলো আমাদের যুগল হৃদয়...।
পিচফল খেতে তখনো সূর্য ওঠেনি
সুমিষ্ট ঝর্ণা জলে ডুবে ছিল আঁখি
বেদুইন শিশির-খণ্ড সুকোমল বৃষ্টি স্নানে তন্দ্রাতুর ।
তুমি নিঃশ্বাসে টেনে নিচ্ছিলে জোছনারগুড়ো ফুলের ভ্রূণ ।
শুধু আমি ...কাঁপছিলাম
ঢেউ শীর্ষে দেখতে পেয়ে,এক থোকা জলপরী সুখ ।
এইতো ... এইখানে
জন্ম নিয়েছিলো নবীন ঋতু,স্বপ্ন-ঘন কম্পমানতা ।
অলংকৃত প্রত্যয়ের কৃষিজমি ।
ঘূর্ণাবর্তে সময় হারিয়েছে তবু ...
এই দেখো জীবন্ত প্রহর আজো মসৃণ ।
টগবগে ঝর্ণা গুলো চিবুকে নিয়ে রত্নরাজি
ধারণ করে আমাদের প্রেম।
শুধু তুমি আমি নেই
তবু দেখো এই স্বর্গ প্রাসাদ কি দীপ্তময় আলোয়ে উজ্জ্বল ।

ধূম্রতা

ধূম্রতা 
- তানি হক 

এই যে অস্থিরতা 
এর যেন কোন হ্রাস-প্রবণতা নেই 
ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশটা যেমন বেরসিক  
পাইন পাতায় অপসৃত কিশোরী বাতাস
যেমন চঞ্চলে বিনুনি দোলায় ।   
তার চেয়েও অতীব খামখেয়ালীময়
বিচরণ এ হৃদমহাজনের । 
এখন দর্শনমুখোর তরুণ বিকেল  
অথচ কাঠফাটা নিশ্বাস ঠোঁটে হুমড়ি খেলো !
তুমিই বলো  ! একি খুব বেশি  আবেগীয় ধূম্রতা নয় ?
তোমার চোখে পাহুন মাখা হাসি 
এর কেন্দ্রস্থলেই যে আমার উদ্বেগের ঘন ধোঁয়া জমে আছে ।
সেখানেই যত পার্থিব ভ্রূ সংকোচন, উদ্যত অক্ষেমার ধ্যানযুগ । 
ওই চোখের কোনে শুষ্ক হাস্যরস গড়াচ্ছে 
সেইসব বেখেয়ালি মর্মরতার পদধ্বনি গুনতে জানি
তুমি কি অবগত নও! 
আমি আর এই অস্থিরতা, মর্মাহত এক প্রেইরি পেড়িয়ে
তোমার অবধি পৌছুতে পারি !